” মোবিন internee শেষে লেখক হবেন নাকি চিকিৎসক….??? এইসব অসুখ , গল্প কবিতা আর অপুষ্টি নিয়ে লেখা বাদ দেন । সমাজের অসংগতি নিয়ে লিখেন ।আমরা তো লিখতে পারি না । আপনারা যারা লেখালেখি করেন , তারা অন্যায় অবিচার এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না জানালে, কারা রুখে দাঁড়াবে । ”
কথাটা এখনো আমার কানে ভাসে । 2010 সালের কথা । আমি তখনো চিকিৎসক হয়নি । Medicine Department এর Internee ছিলাম ( চিকিৎসক হবার জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলাম )।
এই প্রশ্নটা যিনি আমাকে করেছিলেন, তিনি ভীষণ honest এক চিকিৎসক । মরহুম ডাক্তার মুরাদ ।যিনি ছিলেন আমাদের শিকদার মহিলা মেডিকেল কলেজের Medicine Department এর Register.
কাজের প্রতি ভীষণ নিবেদিত প্রাণ এক শিক্ষক ও চিকিৎসক ছিলেন তিনি । আমার থেকে মাত্র এক বছরের বড়ো ছিলেন তিনি । অথচ উনার ভয়ে আমরা সব সময় দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকতাম ।
এই বুঝি আমাদের বকা দিল, রোগীর ফাইলে কোন ভুল পেল……..আবারো হয়তো Follow up লিখতে বলবে ……!!!
সঠিক কাজের জন্য তিনি সব সময় উদগ্রীব থাকতেন । ভীষণ সুদর্শন, ঝামেলা বিহীন আর বিনয়ী এই মানুষ টা কে আমরা কেউ ভুলতে পারি না, আর কোন দিন ভুলবো না । তিনি আমাদের অনেকেরই অসংখ্য উপকার করেছেন ।
আমি অনুভব ( আমার ছেলে ) কে নিয়ে অনেক কষ্ট আর যুদ্ধ করে চিকিৎসক হয়েছি । ছোট্ট একটা শিশু কে রেখে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে duty করতে গেছি । অনুভব যতবার অসুস্থ হয়েছে , মুরাদ sir আমাকে লেখাপড়া, ভালো duty schedule দেয়ার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন । আমাকে বার বার সাহস দিয়েছেন । শুধু আমি না, আমাদের অসংখ্য চিকিৎসক sir এর কাছে ভীষণ ভাবে কৃতজ্ঞ ।
এই ভালো মানুষ টা আজ আর পৃথিবীতে নেয় । যিনি আমাকে বলেছিলেন, সমাজের অন্যায় এর বিরুদ্ধে লিখতে, সেই মানুষ টার জন্য ভরে উঠেছিল সংবাদ মাধ্যম । মিডিয়া জগতে বয়ে গেছিলো আন্দোলন এর ঝর ।
এমন নিরীহ এক মানুষের এই পরিস্থিতি হবে , আমরা কোন দিন ভাবিনি । অনেক Medical College এর চিকিৎসকেরা বিভিন্ন ভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছিল ।
কারা যেন sir কে মেরে পানিতে ফেলে দিয়েছিল । লাশ উদ্ধার হয়েছিল প্রায় তিন দিন পর । আমার প্রিয় বান্ধবী আইরিন কোন এক সকালে কাদতে কাদতে আমাকে জানাল এই ঘটনা ।
মুহূর্তে ফোন করলাম, আমাদের সবার প্রিয় Dr Zaman sir কে ( Surgery Department …..Sikder Medical College and Hospital Dhaka ) ।
উনার কাছেও মুরাদ sir এর মৃত্যুর খবর শুনে আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না ।
বিধাতা তুমি কেন এমন ঘটনা এই ভালো মানুষ টার কপালে লিখে রেখেছিলা !!!
উনি মারা যাবার পর অনেক মানব বন্ধন , মিছিল …….হলো । ফেসবুকে ঝর বয়ে গেল । পরিণামে ঘটলো সেই চির চেনা ঘটনা । খুনি কে আজ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া গেল না । খুনের কোন বিচার হলো না ।
বিচার চাই , বিচার চাই…..বলতে বলতে আর লিখতে লিখতে আমরা নীরব দর্শক হয়ে গেলাম ।
এক সময় সংবাদ মাধ্যম গুলো ভুলে গেল ডাক্তার মুরাদ কে ।
আমরা সবাই sir কে ভুলে গেছি ।
কিন্তু কিভাবে ভুলে থাকবেন sir এর পরিবার ………???
উনার সবচেয়ে বড় অপরাধ ছিল, উনি বাংলাদেশের মানুষ ছিলেন, যেখানে মৃত্যু খুব সাধারণ একটা ঘটনা । চা কফি খাওয়ার মতো খুব সাধারণ কিছু ।
Sir pls pls pls forgive us.
আমরা আপনার খুনের বিচার করতে পারিনি ।
আমরা সাধারণ মানুষ , আমরা ভীষণ অসহায় ।
আমরা আপনাকে অকালে কবর দিতে পেরেছি । কিন্তু খুনি কে কঠিন শাস্তি দিতে পারিনি ।
SIR Please forgive us.
আপনি পরপারে অনেক ভালো থেকেন ।
অনেক অনেক ভালো ।
ইতি,
হতভাগা আমরা ……।
শিকদার মহিলা মেডিকেল কলেজের সকল প্রকার stuff ও চিকিৎসকেরা আপনাকে অশেষ শ্রদ্ধা জানাই ।